Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

পোল্ট্রিশিল্পের যত সঙ্কট

এম. এ. কাদের | প্রকাশের সময় : ৫ জুলাই, ২০২১, ১২:০২ এএম

দেশের মানুষের প্রোটিনের চাহিদা মেটানোর জন্য মুরগী উৎপাদনের বিকল্প নেই। বেকার সমস্যা দূরীকরণেরও এই শিল্পকে বাঁচিয়ে রাখা অনস্বীকার্য। আমাদের দেশে পোল্ট্রি শিল্প আশির দশকে শুরু হলেও মূলতঃ ২০০০ সালের পর থেকে এর বিস্তৃতি ঘটে। বর্তমানে এই শিল্পে প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষভাবে প্রায় দেড় কোটি লোকের কর্মসংস্থান হচ্ছে।

এই শিল্পের বিপন্নদশার কারণগুলির মধ্যে রয়েছে চাহিদার তুলনায় অধিক উৎপাদন, বিদেশি কোম্পানিদের অনুপ্রবেশ, শুধুমাত্র রান্নার মাংস হিসেবে ব্যবহার করা, বিদেশে রপ্তানি না করা, উৎপাদিত মুরগীর সরকার কর্তৃক নির্ধারিত মূল্য না থাকা ও রোগ নির্ণয়ের জন্য ডাক্তার-ল্যাবরেটরি না থাকা। এছাড়া দীর্ঘদিন ধরে করোনার প্রভাব, মুরগীর মাংসের উপকারিতা স¤পর্কে ভোক্তার ধারণা না থাকা, মুরগীর খাদ্য, ঔষধ-ভ্যাক্সিন, অন্যান্য উপকরণের অধিক মূল্য এবং বাচ্চা উৎপাদনকারী হ্যাচারী কৃষি ভিত্তিক হলেও ব্যাংক ঋণ ও রেয়াতি মূল্যে বিদ্যুৎ না পাওয়া ইত্যাদি

প্রোটিনের উৎস হিসেবে উন্নত বিশ্বে যেমন কানাডা, জাপান, আমেরিকায় বছরে একজন মানুষ গড়ে গোশত খায় প্রায় ৪২ থেকে ৪৪ কেজি। মালয়েশিয়ায় প্রতিজন গড়ে বছরে মুরগীর গোশত খাচ্ছে ৪০ কেজি। সেখানে আমাদের দেশে প্রতিজন মুরগীর গোশত খায় বছরে মাত্র ৪ থেকে ৫ কেজি। বর্তমানে দেশে ব্রয়লার এবং লেয়ার বাচ্চা উৎপাদনকারী হ্যাচারীর সংখ্যা প্রায় ৭০ থেকে ৮০টি। আমাদের দেশে শুধু ব্রয়লার বাচ্চা উৎপাদন হচ্ছে প্রতিদিন প্রায় ২০ লক্ষ পিস, যা দিয়ে গোশত উৎপাদন হচ্ছে প্রায় তিন হাজার মেট্রিক টন। কিন্তু প্রতিদিন চাহিদা আছে দুই হাজার মেট্রিক টন। উদ্বৃত্ত থাকছে প্রায় এক হাজার মেট্রিক টন। একারণেই উৎপাদনকারীরা দীর্ঘদিন ধরে ব্রয়লার মুরগীর দাম পাচ্ছে না।

উন্নত দেশের মানুষ আমাদের দেশের তুলনায় মুরগীর গোশত খায় ৮ থেকে ৯ গুণ বেশি, ডিম খায় ৭ থেকে ৮ গুণ বেশি। দেশে মুরগীর গোশত এবং ডিমের চাহিদা এত কম থাকা সত্তে¡ও ভ্রান্তনীতির কারণে ইতোমধ্যে বিদেশি কোম্পানিগুলো দেশে প্রবেশ করে, পোল্ট্রিশিল্প ধ্বংস করার জন্য জোরে-সোরে ব্রয়লার বাচ্চা, ডিম ও কমার্শিয়াল মুরগী উৎপাদন শুরু করেছে।

বর্তমানে ব্রয়লার বাচ্চা উৎপাদন খরচ প্রায় ৩২ টাকা থেকে ৩৩ টাকা হলেও বিদেশি কোম্পানিগুলোর আগ্রাসন এবং অধিক উৎপাদনের কারণে গত প্রায় ৪ বছরের বেশি সময় ধরে ব্রয়লার বাচ্চা বিক্রয় হচ্ছে ১০ টাকা থেকে ২০ টাকায়। এই বিরাট লোকসানের কারণে দেশীয় কিছু হ্যাচারী ইতোমধ্যে বন্ধ হয়ে গেছে, বাকীগুলো বন্ধ হওয়ার পথে। অনুসন্ধানে মুরগীর গোশত না খাওয়ার কারণ সম্বন্ধে জানা যায়, কোনো এক প্রচার মাধ্যমের অপপ্রচারের জন্য মুরগীর গোশত না খাওয়ার প্রবণতা বেড়ে গেছে। মুরগীর খাদ্য তথাকথিত ট্যানারী বর্জ্যদ্রব্য দিয়ে প্রস্তুত করা হয়, এ কারণে পোল্ট্রি মুরগী মানবদেহের জন্য ক্ষতিকর। আসলে বিষয়টি কতটুকু সত্য, এটা বিচার-বিবেচনায় আনা হয়নি। কোনো অসাধু ব্যবসায়ী ট্যানারী বর্জ্য ব্যবহার করতে পারে, তার মানে এই নয় যে, তার ধারাবাহিকতা চলছেই। যাই হোক, সরকার এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনী নিশ্চয়ই এই অসাধু ব্যবসায়ীদের আর এগুতে দেবে না, এটাই আমাদের বিশ্বাস। দেশে প্রতিদিন প্রায় ২০ লক্ষ পিস মুরগী উৎপাদন হলেও রোগ নির্ণয়ের জন্য প্রয়োজনীয় বিশেষজ্ঞ ডাক্তার বা ল্যাবরেটরী নেই। মানুষের সুস্থভাবে বেঁচে থাকার জন্য প্রোটিন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। বুদ্ধির বিকাশ ঘটাতে এবং সঠিক সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য মুরগীর গোশতের মাধ্যমে প্রোটিনের অভাব দূর করা সম্ভব। চাহিদা মতো মুরগীর গোশত খেলে প্রোটিনের অভাব পূরণের মাধ্যমে নিউরোট্রান্সমিটার সঠিকভাবে কাজ করবে। এতে মানুষের বুদ্ধির বিকাশ ঘটবে, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়বে, কাজের স্পৃহা বৃদ্ধি পাবে এবং সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারবে।

গত ২০ বছরে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির কারণে মুরগীর খাবার, ভ্যাকসিন, ঔষধ সরঞ্জামাদির দাম ৭ থেকে ১০ গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। এছাড়া জনশক্তির মূল্য বেড়েছে ৫ থেকে ৭ গুণ। কিন্তু দুঃখের বিষয়, গত ২০ বছরে মুরগীর চাহিদা না বাড়ায় দামের তেমন কোনো পরিবর্তনই হয়নি। পোল্ট্রিশিল্প রক্ষার্থে সরকার ও সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় (প্রাণী সম্পদ)কে অত্যন্ত দক্ষতার সাথে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে। দেশের বড় বড় বাচ্চা উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান, হ্যাচারীগুলোকে অবশ্যই শৃংখলার মধ্যে থেকে চাহিদা অনুযায়ী বাচ্চা উৎপাদন করতে হবে, অথবা উৎপাদনের সাথে মিল রেখে মুরগীর গোশত বিদেশে রপ্তানি করতে হবে। দেশের মানুষের মুরগীর গোশত খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে আগ্রহ সৃষ্টির লক্ষ্যে পাঠ্যপুস্তক, সংবাদপত্র, ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় জোর প্রচার করতে হবে। শুধু রান্না করে খাওয়া নয়, উন্নত দেশের মতো বিভিন্ন খাবারের সাথে মুরগীর গোশত সংযুক্ত করে দেশে-বিদেশে রপ্তানি করতে হবে।

দেশের বেকার সমস্যা দূরীকরণে পোল্ট্রি শিল্প বিরাট ভূমিকা রাখতে পারে। নিয়মতান্ত্রিকভাবে উৎপাদন বৃদ্ধি করে বিদেশে রপ্তানি করলে এই শিল্প প্রসারের সাথে সাথে অনেকাংশে বেকার সমস্যা দূর করাসহ প্রচুর পরিমাণে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করা সম্ভব। এছাড়া মুরগির বিষ্ঠা জৈব সার হিসেবে ব্যবহার করে ফসলের ফলন বৃদ্ধির পাশাপাশি বিদেশ থেকে রাসায়নিক সার আমদানি অনেকাংশ কমানো সম্ভব। কাজেই এ শিল্পকে অবহেলার চোখে না দেখে, এখনই সরকারকে এগিয়ে আসতে হবে। সুপরিকল্পিতভাবে পোল্ট্রিনীতি বাস্তবায়িত হলে বিপন্নপ্রায় এই শিল্পকে বাঁচিয়ে তোলা সম্ভব।
লেখক: সাংবাদিক ও কলামিস্ট



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: পোল্ট্রিশিল্প
আরও পড়ুন
function like(cid) { var xmlhttp; if (window.XMLHttpRequest) {// code for IE7+, Firefox, Chrome, Opera, Safari xmlhttp=new XMLHttpRequest(); } else {// code for IE6, IE5 xmlhttp=new ActiveXObject("Microsoft.XMLHTTP"); } xmlhttp.onreadystatechange=function() { if (xmlhttp.readyState==4 && xmlhttp.status==200) { var divname = "clike_"+cid; //alert(xmlhttp.responseText); document.getElementById(divname).innerHTML=xmlhttp.responseText; } } var url = "https://old.dailyinqilab.com/api/insert_comment_like.php?cid="+cid; xmlhttp.open("GET",url,true); xmlhttp.send(); } function dislike(cid) { var xmlhttp; if (window.XMLHttpRequest) {// code for IE7+, Firefox, Chrome, Opera, Safari xmlhttp=new XMLHttpRequest(); } else {// code for IE6, IE5 xmlhttp=new ActiveXObject("Microsoft.XMLHTTP"); } xmlhttp.onreadystatechange=function() { if (xmlhttp.readyState==4 && xmlhttp.status==200) { var divname = "cdislike_"+cid; document.getElementById(divname).innerHTML=xmlhttp.responseText; } } var url = "https://old.dailyinqilab.com/api/insert_comment_dislike.php?cid="+cid; xmlhttp.open("GET",url,true); xmlhttp.send(); } function rlike(rid) { //alert(rid); var xmlhttp; if (window.XMLHttpRequest) {// code for IE7+, Firefox, Chrome, Opera, Safari xmlhttp=new XMLHttpRequest(); } else {// code for IE6, IE5 xmlhttp=new ActiveXObject("Microsoft.XMLHTTP"); } xmlhttp.onreadystatechange=function() { if (xmlhttp.readyState==4 && xmlhttp.status==200) { var divname = "rlike_"+rid; //alert(xmlhttp.responseText); document.getElementById(divname).innerHTML=xmlhttp.responseText; } } var url = "https://old.dailyinqilab.com/api/insert_reply_like.php?rid="+rid; //alert(url); xmlhttp.open("GET",url,true); xmlhttp.send(); } function rdislike(rid){ var xmlhttp; if (window.XMLHttpRequest) {// code for IE7+, Firefox, Chrome, Opera, Safari xmlhttp=new XMLHttpRequest(); } else {// code for IE6, IE5 xmlhttp=new ActiveXObject("Microsoft.XMLHTTP"); } xmlhttp.onreadystatechange=function() { if (xmlhttp.readyState==4 && xmlhttp.status==200) { var divname = "rdislike_"+rid; //alert(xmlhttp.responseText); document.getElementById(divname).innerHTML=xmlhttp.responseText; } } var url = "https://old.dailyinqilab.com/api/insert_reply_dislike.php?rid="+rid; xmlhttp.open("GET",url,true); xmlhttp.send(); } function nclike(nid){ var xmlhttp; if (window.XMLHttpRequest) {// code for IE7+, Firefox, Chrome, Opera, Safari xmlhttp=new XMLHttpRequest(); } else {// code for IE6, IE5 xmlhttp=new ActiveXObject("Microsoft.XMLHTTP"); } xmlhttp.onreadystatechange=function() { if (xmlhttp.readyState==4 && xmlhttp.status==200) { var divname = "nlike"; document.getElementById(divname).innerHTML=xmlhttp.responseText; } } var url = "https://old.dailyinqilab.com//api/insert_news_comment_like.php?nid="+nid; xmlhttp.open("GET",url,true); xmlhttp.send(); } $("#ar_news_content img").each(function() { var imageCaption = $(this).attr("alt"); if (imageCaption != '') { var imgWidth = $(this).width(); var imgHeight = $(this).height(); var position = $(this).position(); var positionTop = (position.top + imgHeight - 26) /*$("" + imageCaption + "").css({ "position": "absolute", "top": positionTop + "px", "left": "0", "width": imgWidth + "px" }).insertAfter(this); */ $("" + imageCaption + "").css({ "margin-bottom": "10px" }).insertAfter(this); } }); -->